ধ্বংসের পথে জয়দেবের মন্দির !


রণতোষ মুখোপাধ্যায় : নদীয়ার রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি জয়দেব। জয়দেব অমর হয়ে রয়েছেন তার অমর কাব্য “গীতগোবিন্দম্” এর জন্যে।

জয়দেবের স্মৃতি বিজড়িত জন্মভূমি বীরভূমের জয়দেব কেন্দুলি গ্রামের প্রাণকেন্দ্র শ্রী শ্রী রাধাবিনোদ মন্দির। ভারত সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই মন্দিরটির দায়িত্বে।মন্দিরটির পাশে পূর্ত দফতরের রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে জয়দেব কেন্দুলির অজয় নদে অস্থায়ী ব্রিজের উপর সবসময় ভারী যানবাহন চলাচল করায় মন্দিরটি বর্তমানে ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন। প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে মন্দির, ফাটল ধরেছে মন্দিরের কাঠামোয়৷ ইটের মধ্যে ফাঁক দেখা দিয়েছে৷ বিলুপ্ত হয়েছে অনেক স্মারক৷ মন্দিরের কাঠামো এমন অবস্থায় যে, যে কোনও সময় তা বসে যেতে পারে৷ পুরাতত্ত্ব বিভাগের মান্যতাপ্রাপ্ত সংস্থার সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। বীরভূমের পরিচয় বহন করে “জয়দেব-পদ্মাবতীর ওই মন্দির৷”

অজয় নদের তীরে ৩৩৩ বছর আগে বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচাঁদ বাহাদুর জয়দেব মন্দির নির্মাণ করেন৷ কিন্তু তারপরে তেমন করে মন্দিরের বৈজ্ঞানিকভাবে সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ পাশাপাশি মন্দিরের পাশ দিয়ে ভারী যানবাহন যাওয়ায় তার কম্পনে মন্দিরের কাঠামোর অনেক ক্ষতি হয়েছে। সহজিয়া সাধন ক্ষেত্র জয়দেবের ওই মন্দির৷ মন্দিরের কাঠামো ও স্থাপত্যে সমন্বয়ের চিহ্ন স্পষ্ট৷ মন্দিরে যেমন রামায়ণ মহাভারতের আখ্যান আছে, তেমন বিষ্ণুর দশাবতার থেকে দৈনন্দিন জীবনের ছবি আছে৷ যেগুলি ইতিহাস রক্ষায় খুব জরুরী।

কেন্দুলির আদি নাম কেন্দুবিল্ব, এখন বেশি পরিচিত জয়দেব নামে।

কথিত আছে, একবার তীর্থে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেন জয়দেব। কিন্তু অসুস্থতার কারণে যেতে পারলেন না। স্বপ্নে দেখলেন মা গঙ্গা অজয় নদীতে এসে পড়েছে পৌষ, মকরক্রান্তিতে। সেই থেকে এই দিনে অজয়ে স্নানে আসেন সাধু ভক্তরা। মেলা বসে তীর্থের।

বর্তমানে কেন্দুলির জয়দেবের মেলা ভারতের সবচেয়ে বড় মেলা। সরকারিভাবে তিনদিন হলেও, প্রায় পনের দিন চলে। সাধু, ফকির থেকে শুরু করে নগর মানুষ, বিদেশী মানুষের ঢল নামে মেলায়।।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

sixteen + four =