বাগনান ধর্ষন কাণ্ডে উত্তপ্ত রাজ্য


উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতা: গত শনিবার বাগনানে  বছর ৩৪ এর মাথায় রক্তক্ষরণের জন্য ১ বছর ধরে বাকশক্তিহীন এক গৃহবধূকে হাতপা বেঁধে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।  এই গণধর্ষিতা গৃহবধূ লিখিত অভিযোগ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি কুতুব উদ্দিন মল্লিক ও যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস রানার বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ এই ২ অভিযুক্তের নাম বদল করে জয়নাল মল্লিক , রহমত আলি ও শহিদ মল্লিকের নাম দেয় পুলিশ। এরপর পুলিশ গণধর্ষণের বদলে শ্লীলতাহানির সেকশন দেয় বলে আরও অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে ধর্ষিতা এই গৃহবধূর সঙ্গে বাগনান হাসপাতালে দেখা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গণধর্ষিতার স্বামী বিজেপি কর্মী।

 

মঙ্গলবার  শুভেন্দু অধিকারী টুইট  করে জানান,’ আমি বিস্মিত যে ধর্ষণকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সময়কালে। হাসপাতালে বিজেপি কর্মীর স্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলাম, যিনি বাগনানে কুতুবউদ্দিন মল্লিক এবং দেবাশীষ রানার নেতৃত্বে টিএমসি কর্মীদের দ্বারা নির্মমভাবে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন এই অমানবিক অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার এবং অপরাধীদের বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

 

প্রাথমিক কাজ ওনাকে সুস্থ করে তোলা, হাসপাতালের অব‍্যবস্থা দেখে উন্নত চিকিৎসার জন‍্য ওনাকে কোলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করার ব‍্যবস্থা করেছি,

 

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা দ্বিতীয় অগ্রাধিকার। এটা না হওয়া পর্যন্ত আমি থামব না।’

 

নন্দীগ্রামের বিধায়ক এদিন সাংবাদিকদের বলেন,

 

দেখুন, উনি ( নির্যাতিতা) কথা বলার মতো অবস্থায় নেই ৷ নাকে অক্সিজেন লাগানো আছে ৷ কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলাম ৷ চোখ থেকে জল পড়ল ৷ এর বাইরে আর কী বলা যেতে পারে ? বললাম যে অভিযুক্তদের দেখলে চিনতে পারবেন, মাথা নাড়লেন ৷ সকলের মাঝখানে ফেলে রেখেছে ৷ ট্রিটমেন্টের কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ একটা নল লাগানো আছে অক্সিজেনের ৷ আমরা সেখান  থেকে আজ কলকাতায় এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করিয়েছি  ৷ আমি বেসরকারি হাসপাতালের নাম বলছি না ৷ তাঁকে সুস্থ করে কথা বলানোটাই প্রায়োরিটি ৷

 

গ্রেফতার হয়েছে যারা

 

কোনও গ্রেফতার হয়নি এখনও পর্যন্ত ৷ আপনারা টিভিতে সারাদিন ধরে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি কুতুব আর যুব সভাপতি দেবাশিস রানার নাম দেখিয়েছেন ৷ সেই দুটো লোককে ছেড়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস যে দুটো নাম দিয়েছে, তার মধ্যে আবার একজনের নামে এফআইআর-ও নেই ৷ তার মানে অভিযোগকারিণী বা তাঁর স্বামী যার নাম বলেননি, তাকেও পুলিশ জানতে পেরে গেল, তাহলে পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে রেপ করিয়েছে ? এই

 

হাসপাতাল সুপার প্রসঙ্গ

 

এখানে ইতিমধ্যে এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক, এসপি, প্রশাসন এরা চাপ দিয়েছে ৷ সুপার তো থরথর করে কাঁপছেন ৷ কোনও কথার উত্তর দিতে পারছেন না ৷ বলছেন, স্যর আমার চাকরি চলে যাবে ৷ কেন চাকরি চলে যাবে ? কার চাপ ? প্রাথমিক ভাবে মেডিকেল সেলের চিকিৎসক অর্চনা মজুমদার আমাকে রিপোর্ট করলেন, এখানে মলেস্টেশন করে দিয়েছে, রেপকে উড়িয়ে দিয়েছে, ফিজিকাল অ্যাসল্ট লেখা হয়েছে ৷’ পরে তিনি আরো বলেন, অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া

 

এই কুতুবের মতো তথাকথিত মাননীয় দুধেল গাইরা, তারা এইসব করে বেড়াচ্ছে ৷ তার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ কারণ এই জেলার যিনি এসপি, তাঁর স্ত্রী হচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ ৷ অর্ধাঙ্গিনী যদি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হয়, সেই এসপি-র থেকে সিআরপিসি, আইপিসি -তে জাস্টিস পাবেন কোথায় ?

 

এনার ক্ষেত্রেও প্রথমে দরকার ভাল চিকিৎসা, আজকেই মেলের মাধ্যমে নির্যাতিতার স্বামীকে দিয়ে এনএইচআরসি-তে  অভিযাগ জানানো হবে ৷ কারণ ধর্ষিতা রমণী অভিযোগ জানানোর মতো অবস্থায় নেই ৷ সঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনে অভিযোগ জানানো ৷ এই কাজগুলো আমরা আজই করব ৷ এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন, যত দূর নিয়ে যেতে হয়, আমরা এই কেসটা নিয়ে যাব ৷ কলকাতার উচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট আছে ৷ যেখানে যা করার করব এবং পুলিশের রোলটাও তদন্তে আসা উচিত ৷ কারণ পুলিশ প্রথমে এফআইআর নিতে চায়নি, এটা একটা বড় অভিযোগ ৷

 

কুতুবুদ্দিন মল্লিক, দেবাশিস রানাকে ছেড়ে দেওয়া

 

যাঁদের আনা হয়েছে, এখুনি বলে ফেললে তো সিসিটিভি ফুটেজগুলোকে নষ্ট করবে ৷ থানাতে তো সিসিটিভি আছে ৷ তার থেকে বড় কথা ৩-৪ টে চ্যানেলে তাদের দেখিয়ে দিয়েছেন ৷ অঞ্চল সভাপতি কুতুব আর অঞ্চল যুব সভাপতি দেবাশিস ৷ এদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আরও দু’জনকে তুলে আনা হয়েছে ৷ এসব সারাদিন ধরে বাজিয়েছেন ৷ কিন্তু ওই দু’জন পদাধিকারী, যাঁদের নাম এফআইআর-এ আছে, এদের ছেড়ে দিয়ে নন-এফআইআর নেমকে ফরোয়ার্ড করা হয়েছে, শুধুমাত্র পিঠ বাঁচানোর জন্য ৷ এর বিরুদ্ধে আমরা যা যা করার সবটাই করব ৷ আমাদের মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে কোভিড বিধি মেনে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি ৷ আজ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে যুব মোর্চা ও মহিলা মোর্চা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এই জেলার

 

এসপি-র উপর কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ নেই, পড়াশুনো করে আইপিএস হয়েছেন তো ৷ কিন্তু নিরপেক্ষতা আশা করা যায় না, কারণ ওঁর অর্ধাঙ্গিনী হচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একজন বিধায়িকা ৷ ব্যক্তিগত কোনও আক্রমণ নেই ৷ এই জন্যে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন ভোটের সময় সরিয়ে দিয়েছিল ৷ এখানে শুধুমাত্র আসামী বদল নয়, রিপোর্টকে প্রভাবিত করা হয়েছে ৷ প্রাথমিক রিপোর্টে গ্যাংরেপ-এর বদলে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে ৷ রেপ-এর সেকশন বদলে মলেস্টেশন-এর ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৪ সেকশন লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ এই মহিলাকে, মাকে, দিদিকে আগে বাঁচানো দরকার ৷’

 

 


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

16 − 6 =