মৌসুনী দ্বীপ


চয়ন ভট্টাচার্য : পয়লা বৈশাখের দুদিনের ছুটিতে ঘুরে এলাম মৌসুনী আইল্যান্ড থেকে। যারা বেশী ভিড় পছন্দ করেন না, শহরের কোলাহল থেকে অনেকটা দূরে নিরিবিলি ও নির্জন সমুদ্র সৈকতে প্রিয়জনের সাথে দুদিন সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য মৌসুনীর থেকে আর ভাল কিছু হতে পারে না। আমরা ছিলাম চয়ন দার ক্যাম্প, বালুচড়ী বীচ্ ক্যাম্পে।

এক গ্ৰুপ থেকে চয়নদার নম্বর পাই। ফোন পে থেকে চয়নদাকে ৫০০ টাকা এডভান্স্ পাঠিয়ে তিনটি পরিবারের জন্য তিনটি কটেজ বুক করে নি। গরমের কথা চিন্তা করে আমরা টেন্ট নিইনি, বেড়ার কটেজে ছিলাম।

১৪ এপ্রিল ভোর ৫টার মধ্যে সবাই বালিগঞ্জ স্টেশনে পৌঁচ্ছে গেলাম, কারণ শিয়ালদহ থেকে ৫:১২ মিনিটে নামখানা লোকাল ছাড়ে, বালিগঞ্জে ট্রেন আসে প্রায় ৫:২২ মিনিটে। ট্রেনে উঠে সবাই যে যার মতো সিটে বসে পড়লাম। প্রায় আড়াই ঘন্টার রাস্তা। ট্রেনের মধ্যেই ঘর থেকে আনা পাউরুটি, বাটার, কলা, ডিমসেদ্ধ, বিস্কুট, কেক, জুস দিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট সারা হল। যাইহোক ৮:১০ নাগাদ নামখানায় নামলাম। এখন তো হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর ওপর ব্রিজ চালু হওয়াতে আর খেয়া পেরোতে হয় না। চয়নদাকে বলাই ছিল গাড়ী পাঠাতে। কথা মতো, সুমোতে আটজন উঠে সোজা চলে গেলাম বাগডাঙ্গা ঘাটে। গাড়িতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগলো। ৯:৩৫ মিনিটের খেয়া ধরে নদী পেরিয়ে ওপারে উঠলাম। ওখান থেকে টোটো নিয়ে ৩০ মিনিটের মধ্যে সোজা চয়নদার ক্যাম্পে। ভোরবেলার ট্রেনটা ধরাতে সুবিধা হয়েছিল। রোদটা চড়া ছিলনা আর আমাদের কষ্টও হয়নি ।

ক্যাম্পে ঢুকেই মনটা বেশ ভাল হয় গেল। সাদা বালিয়ারির ওপর এই ক্যাম্প। ক্যাম্পের ভিতরে অনেক গাছপালা, বেশ হাওয়াও দিচ্ছে। ক্যাম্পের ভিতরে বেড়ার কটেজ, ফ্যামিলি টেন্ট, ছোট ছোট টেন্ট সবমিলিয়ে বেশ জমজমাট ব্যাপার। ঢুকতেই ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস্ চলে এলো, কটেজে যে যার লাগেজ রেখে চেঞ্জ করে নেওয়া হল।

ওই দেখা যায় সমুদ্র, সবাই ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এখানে অল্প ঢেউ হওয়ার জন্য বাচ্ছারা খুব মজা করেছে সাথে বড়োরাও। প্রায় দেড় ঘন্টা জলে দাপাদাপির পর সবাই ক্যাম্পে ফিরে এলাম । একে একে সবাই বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ক্যাম্পের মধ্যে দুটি বাথরুম কিন্তু বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। জলে অতক্ষন দাপাদাপির পর বেশ খিদে অনুভব করছিলাম। তাই ঝাউ বনের তলায় টেবিল চেয়ার পাতা হল। প্লেটে খাবারও চলে এলো। আহা কত রকমের পদ ভাত, ডাল, আলুভাজা, মিক্সড্ সব্জি, চিংড়ীর মালাইকাড়ি , ভেটকির কালিয়া, চাটনি, পাঁপড়, আইসক্রিম ইত্যাদি। এককথায় অসাধারণ। অনেক ভোরবেলায় ওঠার জন্য সবাই যে যার কটেজে গিয়ে একটু রেস্ট নিল। প্রকৃতির টানে আমি চললাম গ্ৰাম ঘুরে দেখতে আর কাঁকড়া কিনতে। চয়নদার কাছে শুনেছি, এখানের এক জায়গায় কাঁকড়ার আড়ত আছে, ক্যাম্পের একটি ছেলেকে নিয়ে কাঁকড়া কিনতে চললাম। এক কেজি কাঁকড়া কিনে নিলাম আর বললাম বেশ স্পাইসি করে বানাতে। আর তার সঙ্গে চিকেন বারবিকিউর অর্ডার দিয়ে দিলাম সন্ধ‍্যার জন্য।

বিকেলবেলা সবাই বীচে একটু হাঁটতে বেড়ালাম। বীচে দাঁড়িয়েই সূর্যাস্ত দেখলাম। অপরুপ সে দৃশ্য, জলে যেন কেউ সোনা ঢেলে দিয়েছে। বীচে বেশ কিছু লোক দেখা গেল, পয়লা বৈশাখের ছুটিতে অনেকেই ঘুরতে এসেছে। এখানে ১৪টি ক্যাম্প আছে আর সব কটিই পাশাপাশি লাগোয়া। অন্ধকার নামতেই মিষ্টি শীতল হাওয়া বইতে লাগলো। ক্যাম্পে ফিরে এসে দেখি কফি রেডি আর সাথে মুড়ি মাখা ও পিঁয়াজী। কিছুক্ষনের মধ্যেই স্পাইসি কাঁকড়া ও চিকেন বারবিকিউ এসে গেল। যে কোন বড় বড় রেস্তোরাকেও হার মানাবে, কি স্বাদ তার । গানে, নাচে সময় কেটে গেল । এরপর চেয়ার নিয়ে সোজা বীচে গিয়ে কিছুটা সময় কাটালাম।

এখানকার রাত যেন এক অপূর্ব মায়াবী রাত। একদিকে সমুদ্রের সোঁ সোঁ হাওয়া আর গর্জনের আওয়াজ , অন্যদিকে হাওয়াতে গাছের পাতার মর্মর শব্দ ও অর্ধচন্দ্রিমার জ‍্যোৎস্নার আলো আপনাকে মাদকতায় ভরিয়ে তুলবে। আর আপনি যদি গান নাও জানেন নিজের অজান্তে গুনগুন শুরু করে দেবেন। এই ভাবেই অনেকটা সময় কাটার পর ডাক আসলো রাতের ডিনারের । রুটি, সব্জি, দেশী মুরগীর ঝোল। তারপর বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিলাম ।

সকালে একটু দেরি করে উঠলাম। ফ্রেশ হতেই চা চলে এলো। তার একটু পরেই লুচি ও আলুরদম । আজ নতুন বছরের প্রথমদিন। তাই সবাইকে নিয়ে বেশ মজায় কাটলো দুটি দিন। আরও একবার সমুদ্রে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।

‘মৌসুনী’ তুমি এমনই সুন্দর থাকো বছরের পর বছর । হয়তো আবার কখনো ফিরে আসবো তোমার কাছে, প্রকৃতির টানে, নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে।

তথ্য : শিয়ালদহ থেকে নামখানা লোকালে লাস্ট স্টেশন নামখানা । নামখানা থেকে সুমো করে বাগডাঙ্গা ঘাট (৪০০ টাকা) । খেয়া পেড়িয়ে ওপাড়ে (মাথাপিছু ৩টাকা করে) । টোটো করে ক্যাম্প পর্যন্ত (মাথাপিছু ৩০ টাকা করে ) ।
বালুচড়ী ক্যাম্প এ প্রতি দিন মাথা পিছু ১০০০ টাকা করে ।
চয়ন দার নম্বর : 9749187504


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

10 − 5 =