মানুষ যেখানে জানোয়ারের অধম…
৯ আগস্ট, ২০২১, নিজস্ব প্রতিবেদন: কেউ বলেছিল খেলতে খেলতে খেলোয়াড়; তবে কি জানতে জানতে * ?
দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভার অন্তর্গত বি গার্ডেন অঞ্চলে এক বৃদ্ধ-বৃদ্ধার শেষজীবনের এই রোমাঞ্চকর সত্য ঘটনা প্রমান করে মানুষকে জানোয়ার বলার অর্থ জানোয়ারকে অপমান করা।
সামান্য চাকরীতে অনেক কষ্ট করে বৃদ্ধ ১৯৮১সালে আনুমানিক ৩কাঠা জমি কিনে মাথার ছাদ তৈরী করেছিলেন শেষের দিনগুলো একটু নিশ্চিন্ত কাটানোর লক্ষ্যে।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। দূরে থেকে হিতাকাঙ্খী সেই দুহিতা অর্থাৎ মেয়েরা সবাই বিবাহিত কিন্তু কেউই রোজগেরে নয় এবং সম্পূর্ণভাবে স্বামীর উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল।
ছেলে ও প্রতিষ্ঠিত উচ্চবিত্ত নাতিরা অধিকার বোধের চওড়া কাঁধের জোরে বাবা-মায়ের / ঠাকুরদা-ঠাকুমার গৃহে বসবাস করে ঠিকই, কিন্তু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সাহায্য করা দূর অস্ত, বরং আরও কিছু সুবিধা আদায়ে তাদের অভ্যাসগত দায়বদ্ধতা খুব স্পষ্ট।
এবং বর্তমান গৃহবধূদের অত্যাচারের সৌজন্যে বসত-ভিটে ৪০বছরেই ধ্বংসাবশেষে পরিণত, ছাদ ধ্বসে গিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মরনের জন্য হয়ত অপেক্ষা করছে যমদূত।
৯২বছরের বৃদ্ধ এখন-ও গ্রাসাচ্ছদনের জন্য উপার্জন করেন, দোকান-বাজার করেন, পরিবারের সকলের কাছ থেকে একমুঠো সহযোগিতা চাওয়া হয়ত বিলাসিতা, হয়ত পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অপরাধ, কিন্তু ইলেকট্রিক বিল, সম্পত্তি কর ইত্যাদি যে ৯২বছরের বৃদ্ধেরই একান্ত দায়।
আসলে লজ্জা শব্দটা অক্লেশে অভিধান থেকে মুছে ফেলেছে এই পরবর্তী প্রজন্ম, তাই সম্পত্তি ভোগ করবো কিন্তু দায় নেব না- এই তত্ত্ব গর্বের সাথে প্রতিষ্ঠা করেই এগিয়ে চলেছে সমাজের বুকে।
আধুনিকতার মোড়কে এইধরনের বর্বরতা এখন ঘর ঘর কি কাহানি। জন্মদিনের কেক হুল্লোরে শুধু পায়েস অপ্রাসঙ্গিক নয়, উদ্দাম বার্থ ডে পার্টি এখন কান্নার শব্দকে চাপা দিয়ে নিজেদের ব্যর্থ আভিজাত্য জাহির করার হাতিয়ার।
পরবর্তী লক্ষ্য যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে ছলে-বলে-কৌশলে ভিটেছাড়া করা তার অকাট্য প্রমান আশেপাশের পি কে রায়চৌধুরী লেনের প্রতিবেশী। প্রায়ই মধ্য রাতের বিভিন্ন নাটক হজম করতে হয় প্রতিবেশীদের।
গত ২৭ জুলাই, ২০২১ মধ্যরাতে আক্রান্ত হলেন বৃদ্ধা- অচৈতন্য মানুষটিকে জ্ঞান ফেরাতে বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ লাশের মত টানতে টানতে বাথরুমে এনে নিউমোনিয়ার রোগী বৃদ্ধার মাথায় জল ঢালতে বাধ্য হলেন কিন্তু অপত্য স্নেহে সযত্নে আড়াল করে গেলেন অপরাধীদের ঠিক যেমনভাবে এতদিন আগলে রেখেছেন তার এই অমানুষ পরিবারবর্গকে।
আত্মীয়তা অর্থাৎ আত্মার সম্মিলনের স্বার্থে বৃদ্ধা এখন আমার কাছে, ওনার চোখে ও মাথায় ভয়ঙ্কর চোট- দেহের তথা মনের আঘাতে এখন স্মৃতিও(STML) হারিয়ে ফেলছেন ৮৫বছরের বৃদ্ধা ছবি চক্রবর্তী- বুঝতে পারেন না দিন-রাতের পার্থক্য।
ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ প্রার্থনা ৯২বসন্তের বৃদ্ধ ঠাকুরদাস চক্রবর্তী আবার যেন পাশবিক অত্যাচারে আক্রান্ত না হন- আমাদের মত গরীবদের যে সাধ আছে কিন্তু সাধ্য ভীষনভাবেই সীমাবদ্ধ।
বর্তমানে বৃদ্ধা এখন মেজো মেয়ে গীতা গাঙ্গুলি ও তার স্বামী কল্যাণ গাঙ্গুলি র তত্ত্বাবধানে।